ডেস্ক রিপোর্ট: প্রথমবারের মতো সাতক্ষীরার গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরে সংসদে বক্তব্য রেখেছেন দৈনিক পত্রদূতের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, সাবেক প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা স. ম আলাউদ্দীন তনয়া, বঙ্গবন্ধু পেশাভিত্তিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাতক্ষীরা জেলা শাখার শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য লায়লা পারভীন সেঁজুতি-এমপি।
রবিবার (৩ মার্চ) সান্ধ্যকালীন অধিবেশনে লায়লা পারভীন সেঁজুতি ৯ মিনিটের বক্তব্যে তুলে ধরেন তাঁর আবেগঘন বক্তব্য। পিতা হারানোর বেদনা নিয়ে লায়লা পারভীন সেঁজুতি-এমপি বলেন, আমাকে সংসদের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসিয়েছেন এবং সাতক্ষীরার মানুষের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন এজন্য সাতক্ষীরাবাসীর পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আপনার (মাননীয় স্পিকার) মাধ্যমে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
৫২’র মহান ভাষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭১’র মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ, ৭৫’এর ১৫ আগস্ট, ৩রা নভেম্বর জাতীয় চার নেতা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহিদদের প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা নিবেদন করে তিনি আরও বলেন, আমার পিতা স. ম আলাউদ্দীন বঙ্গবন্ধু মনোনীত ৭০-এর নির্বাচনের কনিষ্ঠ গণপরিষদ সদস্যদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। মাত্র ২৫ বছর বয়সে তিনি গণপরিষদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাঁড়া দিয়ে আপামর জনগণ যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন। তিনি একজন সংসদ সদস্য হয়েও সেনাবাহিনীতে কমিশন অফিসার হিসেবে যোগদান করে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন। তিনি সাতক্ষীরা অঞ্চলে ৮ ও ৯ নম্বর সেক্টরে অস্ত্র গোলা বারুদসহ সকল কিছু যোগান দিতেন। তৎকালীন সামারিক সরকার এসব কারণে তাকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছিল এবং তাকে জীবিত বা মৃত ধরিয়ে দিতে পারলে ৪০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে সারাদেশে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তিরা যেভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিলো। আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার চক্রান্ত হয়েছিলো। ঠিক সেই সময় ৮০’র দশকে আমার পিতাসহ সাতক্ষীরার আরও কয়েক কয়েকজন ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিলো। সেই লড়াই করতে যেয়ে তাঁরা দেখেছিলেন স্বাধীনতার বিরোধীদের হাতে সিংহভাগ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সেক্টর বন্দি। সেই বন্দি দশা থেকে মুক্ত করার জন্য আমার পিতাসহ সবাই একত্রে সমাবেত হয়ে চেষ্টা শুরু করেছিলেন স্বাধীনতার পরাজিত শক্তিকে দমন করার। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ এর ১২ জুন আমরা বাবার প্রাণের সংগঠন ক্ষমতায় আসিন হবে এমন স্বপ্নে যখন বিভোর, ২৩ জুন যখন সরকার গঠন হয়েছিলো তার মাত্র কয়েকদিন আগে ১৯ জুন আমার পিতা ঘাতকের বুলেটে হত্যার শিকার হয়েছিলেন। তিনি দৈনিক পত্রদূত নামে একটি পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই পত্রিকা অফিসে কর্মরত অবস্থায় হত্যার শিকার হয়েছিলেন। আমরা ৫ বোন এক ভাই। ভাই জয় তখন ছোট ছিলো। আমার মা কঠিন সংগ্রাম করে আমাদের আজকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। সাধারণ আত্মীয় স্বজনের দুয়ারে দুয়ারে গিয়েছি। আমি আমার পিতাকে হারিয়ে সেই যন্ত্রণা ভুলতে পারিনা। আর জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর পরিবারের সকল সদস্যকে হারিয়েও কী যন্ত্রণা বুকে নিয়ে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তা আমি বুঝতে পারি।
তিনি আরও বলেন, সাতক্ষীরা একটি সীমান্তবর্তী জেলা। সেখানে মৌলবাদি চক্র এখনো পর্যন্ত মাথা চাড়া দিয়ে বসে আছে। বাংলার অর্ধেক নারী সমাজ। তাদের ঘরে আবদ্ধ করে রাখলে কিভাবে আমরা মুক্তি পাবো।
তিনি আরও বলেন, ২০১৩-১৪ সালে সাতক্ষীরার কি বিভীষিকাময় অবস্থা হয়েছিলো সেটা আপনারা জানেন। সে সময় আমার দলের ১৬জন নেতাকর্মী হত্যার শিকার হয়েছিলো। বিভীষিকা সম্পর্কে সারাদেশ এবং সারা পৃথিবী জেনেছিলো। জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি সেখানে গিয়েছিলেন এবং আমার নেতাকর্মীদের সবার খোঁজ খবর নিয়েছিলেন। তাদের অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পরবর্তীতে তাঁরা তাদের কৌশল পাল্টেছে। এখন তারা নির্বিঘেœ একটু সিস্টেম পরিবর্তন করে অন্য ধারায় আমাদের ভিতরে প্রবেশ করে আমাদের ভুল পথে ধাবিত করার চেষ্টা করছে। গ্রামের সহজ সরল নারীদের তারা ভুল পথে ধাবিত করার চেষ্টা করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরায় উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সাতক্ষীরা বাইপাস, ম্যাটস্সহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু কিছু ধর্ম ব্যবসায়ীর কারণে আমরা উন্নয়ন দৃশ্যমান করতে পারছি না। আমাদের প্রাণের বিনিময়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদীর্ঘ জীবন আমরা চাই। এজন্য আমাদের মৌলবাদী শক্তির হাত থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য লায়লা পারভীন সেঁজুতি-এমপি এসময় সাতক্ষীরার গৌরবগাঁথা ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমস্যা-সম্ভাবনার কথা মহান জাতীয় সংসদে তুলে ধরেন।
