সুলতান শাহজান: এক বছরেরও বেশি সময় আগে নির্মাণকাজ শেষ হলেও এখনো কার্যক্রম শুরু হয়নি সাতক্ষীরার শ্যামনগরে নবনির্মিত ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের। ফলে শ্যামনগরবাসী এর সুফল ভোগ করতে পারছে না।
যাবতীয় দুর্ঘটনায় পার্শ্ববর্তী কালিগঞ্জ উপজেলা থেকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। কিন্তু তাতে খুব বেশি উপকার মেলে না।
উপজেলা প্রশাসন জানায়, ২০২০ সালে উপজেলা সদরে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০২১ সালের শেষের দিকে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। বছরখানেক আগে ভবনে রঙ করার কাজও শেষ হয়েছে।
শ্যামনগর উপজেলা সদরে নির্মিত ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কয়েকজন বসে অলস সময় পার করছে। মেইন ফটকে তালা লাগানো। কোনো গাড়ি বা আগুন নেভানোর সরঞ্জামও চোখে পড়েনি।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সূত্রে জানা যায়, তিনতলা বিশিষ্ট এ ফায়ার স্টেশনে দুটি গাড়ি ও ২৭টি পদে জনবল থাকার কথা। এসব পদের মধ্যে রয়েছে দুইজন অফিসার, চারজন চালক, ১৬ জন ফায়ারম্যান ও অন্যান্য পদে পাঁচজন। এসব পদে লোকবল নিয়োগ হলেও কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় তারা অন্যান্য জায়গায় প্রেষণে কাজ করছে।
স্টেশনটিতে দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা জানান, আমরা বর্তমানে চারজন স্টাফ গত ছয় মাস যাবত এখানে দায়িত্বে রয়েছি। খাওয়া-দাওয়ার কষ্ট আছে। বিদ্যুৎ বিল বাকেয়া থাকার কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে। কোনো কাজকর্ম নেই। অলস সময় পার করছি। এটি কেন চালু হচ্ছে না সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভালো বলতে পারবেন।
এ ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সহকারী পরিচালক (খুলনা) মোঃ ফারুক হোসেন শিকদার বলেন, শ্যামনগরের ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ভবন এবং বেশ কিছু আসবাবপত্র আমাদের সিডিউল অনুযায়ী বুঝে পাইনি। এজন্য আমরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনটি উদ্বোধন করতে পারছি না। অগ্নিনির্বাপণ গাড়ি ও লোকবল নিয়োগ হয়ে গেছে। অগ্নিনির্বাপণ গাড়িগুলো পার্শ্ববর্তী অন্য উপজেলার স্টেশনে কাজ করছে এবং নিয়োগ হওয়া লোকবল ডেপুটেশনে অন্যান্য জায়গায় কাজে নিয়োজিত রয়েছে। আমরা গণপূর্ত বিভাগকে বারবার মৌখিক ও লিখিতভাবে স্টেশনের অসমাপ্ত কিছু কাজের কথা জানিয়েছি সেগুলো সংশোধন করে আমাদের কাছে হস্তান্তর করলে স্টেশনটি খুব দ্রুত চালু হবে।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হায়াত মুহাম্মদ শাকিউল আজম বলেন, দাপ্তরিক কিছু কাজ বাকি থাকায় ফায়ার সার্ভিসটি চালু করতে দেরি হচ্ছে। আশা করছি অসমাপ্ত কাজগুলো খুব দ্রুত শেষ হবে এবং শীঘ্রই ফায়ার সার্ভিস স্টেশনটি চালু হবে।
এদিকে কালিগঞ্জ উপজেলা ফায়ার স্টেশন থেকে শ্যামনগরে আগুন নেভাতে গাড়ি আসতে অনেক দেরি হয়। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হয় বলে দাবি স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর।
এ ব্যাপারে নকিপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদ ফিরোজ হোসেন বলেন, আমাদের বাজারে আগুন লাগলে পার্শ্ববর্তী কালিগঞ্জ উপজেলা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট এসে কাজ করে। এক্ষেত্রে দেখা যায় তারা আসার আগেই ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। অথচ আমাদের বাজারের ৩০০ মিটার দূরত্বেই ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। এটির কার্যক্রম থাকলে আমাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমে আসত।
জানতে চাইলে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আক্তার হোসেন বলেন, ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। শ্যামনগরে নির্মিত ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম যাতে শুরু করা হয় সে ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের মাসিক মিটিংয়ে কয়েকবার উত্থাপন করা হয়েছে। আশা করি খুব শীঘ্রই এর কার্যক্রম শুরু হবে।
শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস. এম আতাউল হক দোলন বলেন, একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের অভাবে শ্যামনগরের অগ্নিদুর্যোগ সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফায়ার সার্ভিস স্টেশন চালু হলে আশা করি এখন সে কষ্ট দূর হবে।
