সুলতান শাহজান: সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৫০ হেক্টর জমিতে উচ্ছের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ভুরুলিয়া ইউনিয়নের হাটছালা গ্রামেই উচ্ছের আবাদ ২৫ হেক্টর জমিতে। এতে বদলে গেছে গোটা গ্রামের চিত্র। হাটছালা এখন যেন ‘উচ্ছের গ্রাম’। সেই সাথে সচ্ছলতা ফিরেছে হাটছালা গ্রামের শতাধিক পরিবারের।
উপজেলা কৃষি অফিস অফিস জানায়, হাটছালা গ্রাম থেকে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ মণ উচ্ছে বাজারজাত করা হচ্ছে। তাদের দেখাদেখি পাশর্^বর্তী কাশিমাড়ি ইউনিয়নের গোবিন্দপুর ও শংকরকাটিসহ কয়েকটি গ্রামেও বেড়েছে উচ্ছের আবাদ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উচ্ছেয় ভরে উঠেছে ক্ষেতের পর ক্ষেত। চাষীরা জমি থেকে উচ্ছে তুলছেন।
হাটছালা গ্রামের কৃষক বিশ্বজিৎ গায়েন জানান, ৩ বিঘা জমিতে উচ্ছে চাষ করেছেন তিনি। এখন প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কেজি উচ্ছে বিক্রি করছেন।
কৃষক পতিরাম মন্ডল বলেন, উচ্ছে চাষ আমার ভাগ্য বদলে দিয়েছে। আগে এমনও দিন গেছে ছয় সদস্যের সংসার চালানোসহ সন্তানদের পড়ালেখার খরচ জোগাতে পারতাম না। কিন্তু এখন আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে। আমাদের গ্রামের একশ’র বেশি পরিবার এখন বেশ সচ্ছল।
অনুপ কুমার মন্ডল বলেন, আমাদের গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে উচ্ছের আবাদ রয়েছে। শুরুতে ব্যাপারীরা প্রতি কেজি উচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায় কিনেছেন। বর্তমানে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি করছি। প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন ব্যাপারী গাড়ি ভরে উচ্ছে কিনে নিয়ে যায়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসেন পাইকাররা।
কৃষক রাজু মন্ডল জানান, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে হাটছালা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে উচ্ছে বেচাকেনার হাট বসে। বাইরের ব্যাপারীরা এখান থেকেই পাইকারি দরে উচ্ছে কিনে নিয়ে যান। যশোর, খুলনা, ঝিনাইদহ, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় যায় হাটছালা গ্রামের উচ্ছে।
উচ্ছে ক্ষেতে দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন সুচিত্রা রানী। তিনি বলেন, ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ৫০ থেকে ৬০ কেজি উচ্ছে তোলা যায়। এজন্য আমরা ১০০ টাকা মজুরী পাই। প্রতিদিন ক্ষেতের একেকটি অংশ থেকে উচ্ছে তোলা হয়। সেই হিসেবে প্রতিটি ক্ষেতই থেকে প্রতিদিনই উচ্ছে তোলা যায়।
তিনি আরো জানান, উচ্ছের বীজবপন থেকে শুরু করে পরিচর্যা, তোলা ও বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে নারীদের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।
খুচরা ব্যবসায়ী আনারুল ইসলাম বলেন, পাঁচ বছর যাবত উচ্ছে কেনাবেচা করছি। আমরা খুচরা কিনে দূর-দূরান্তের ব্যাপারীদের কাছে পাইকারি দরে বিক্রি করি।
সাতক্ষীরা শহর থেকে আসা পাইকারী ব্যবসায়ী ইয়াছিন আলী জানান, তিনি প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ মণ উচ্ছে কিনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠান।
শ্যামনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ নাজমুল হুদা বলেন, উচ্ছে কাঁচা তরকারি হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। পাশাপাশি এর ওষুধি গুণও রয়েছে। উচ্ছেতে ডায়াবেটিস ও বসন্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। উচ্ছে চাষে অধিক লাভ এবং মাটি ও পরিবেশ অনুকূলে থাকায় ভুরুলিয়া ইউনিয়নের হাটছালা গ্রামের কৃষকেরা উচ্ছে চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। উচ্ছে চাষের আওতা দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে।
