ডেস্ক রিপোর্ট: ‘সাতক্ষীরার উন্নয়ন ভাবনা এবং স. ম আলাউদ্দীন’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেছেন, দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা স. ম আলাউদ্দীন শুধু একজন এমসিএ’ই ছিলেন না, তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ও সৃষ্টিশীল চিন্তার মানুষ। আওয়ামী লীগ নেতা স. ম আলাউদ্দীন কখনো অন্যায় অসত্যের কাছে কখনো মাথা নত করেননি। তিনি ছিলেন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন মানুষ, সাহসী ও আপোষহীন নেতা। আপোষহীনতার কারণেই তাকে জীবন দিতে হয়েছে। তাকে হত্যার মধ্যদিয়ে শুধু একজন মানুষকে হত্যার করা হয়নি, সাতক্ষীরার উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (১৭ জুন) সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরিতে দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা স. ম আলাউদ্দীনের ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা আরও বলেন, সাতক্ষীরায় রেললাইন নির্মাণ, পর্যটন শিল্পের বিকাশ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, বসন্তপুর নৌ বন্দর চালু, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ, ভোমরা স্থল বন্দরের উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকার উদ্যোগ নেওয়ার পরও বাস্তবায়নের গতি ধীর। স. ম আলাউদ্দীনের মত নেতা বেঁেচ থাকলে এগুলো আরো দ্রুত বাস্তবায়িত হতে পারতো।
বক্তারা বলেন, সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কর্মমুখী কারিগরি শিক্ষার বিকাশে স. ম আলাউদ্দীন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী স্কুল ও কলেজ। কিন্তু ১৯৯৬ সালের ১৯ জুন ঘাতকের গুলিতে তিনি নিহত হবার পর প্রতিষ্ঠানটি সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়। অথচ বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় কারিগরি শিক্ষাকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। সাতক্ষীরার কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে স. ম আলাউদ্দীনের ভাবনা ছিল খুবই প্রাসঙ্গিক। তার সেই ভাবনা বাস্তবায়িত হলে সাতক্ষীরা আরো বেশি উন্নত হতে পারতো।
বক্তারা সাতক্ষীরার নানা অনিয়ম দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে আরো বলেন, সাতক্ষীরা বাইপাস সড়কের নকশা পরিবর্তন করে নির্মাণ করা হয়েছে। নদী ও খাল খননে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হলেও কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত জেলার ২২ লক্ষ মানুষ। রেল লাইন নির্মাণে ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। কিন্তু রেললাইন নির্মাণে কোন অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সাতক্ষীরায় বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হলেও তা ঢেউ খেলানো অবস্থা। যে কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। ভোমরা স্থলে বন্দরে চলছে চরম নৈরাজ্য। সেখানে ব্যবসায়ীরা টিকতে পারছে না। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। ভোমরা বন্দর থেকে ব্যবসায়ীরা চলে যাচ্ছে অন্যত্র। এর কারণ একটি বিশেষ মহলের ষড়যন্ত্র। পদ্মা সেতু নির্মাণ হলেও যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন না হওয়ায় সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ সুফল পাচ্ছে না। পণ্য পরিবহনে অধিক খরচ হচ্ছে। রেললাইন নির্মাণ হলে এ অঞ্চলের মানুষ পণ্য পরিবহনে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সুফল পাবে।
বক্তারা বলেন, স. ম আলাউদ্দীন বেঁচে থাকলে এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি রুখে দাঁড়াতেন। আজ সেই রুখে দাঁড়ানোর লোকটির বড় অভাব। বক্তারা স. ম আলাউদ্দীনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে ভেদাভেদ ভুলে সাতক্ষীরার সামগ্রিক উন্নয়নে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সকল ন্যায় ভিত্তিক আন্দোলন সংগ্রামে কাজ করার আহ্বান জানান।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাড. আজাদ হোসেন বেলাল। ‘সাতক্ষীরার উন্নয়ন ভাবনা এবং স. ম আলাউদ্দীন’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উদীচীর জেলা সভাপতি শেখ সিদ্দিকুর রহমান।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম।
অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজাহার হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী রিয়াজ, প্রফেসর আব্দুল হামিদ ও কিশোরী মোহন সরকার।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন দৈনিক পত্রদূত এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক লায়লা পারভীন সেঁজুতি, মানবাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত, জেলা জাসদের সভাপতি ওবায়দুস সুলতান বাবলু, বাসদ নেতা অ্যাড. খগেন্দ্র নাথ ঘোষ, দুদুকের পিপি অ্যাড. আসাদুজ্জামান দিলু, আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাড. আজাহারুল ইসলাম, জেলা বাসদের আহবায়ক নিত্যানন্দ সরকার, আওয়ামী লীগ নেতা কাজী আকতার হোসেন, ডা. সুব্রত ঘোষ, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী, জেএসডি নেতা আব্দুর জব্বার, মানবাধিকার কর্মী অ্যাড. মুনির উদ্দীন, ভূমিহীন নেতা কওসার আলী, বাংলাদেশ জাসদের জেলা সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি প্রকৌশলী আনোয়ার জাহিদ তপন, সাংবাদিক রবিউল ইসলাম, অ্যাড. বদিউজ্জামান, সিপিবির জেলা সভাপতি আবুল হোসেন, অ্যাড. একে আজাদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটির জেলা সম্পাদক মুনসুর রহমান, সাংবাদিক আবুল কাশেম, মহিলা যুবলীগের নেত্রী আয়েশা খাতুন খুকুমনি, বায়জিদ হোসেন প্রমুখ।
সভা পরিচালনা করেন জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাড. আবুল কালাম আজাদ। #
১৭.৬.২০২৩
